ইমাম আন-নাওয়াউই'র সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত
ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শারাফ আন-নাওয়াউই (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি আমাদের দেশে ইমাম নববি নামেও পরিচিত৷ ৬৩১ হিজরি সনে (১২৩৩/৩৪ খ্রিস্টাব্দ) দামেস্কের দক্ষিণে অবস্থিত নাওয়া শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷
শৈশবেই জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। অন্য শিশুরা তাঁকে খেলাধুলা করতে জোরাজুরি করলেও কুরআন অধ্যয়নে বিঘ্ন ঘটবে বলে তিনি তাদের সাথে খেলাধুলা করায় আগ্রহ দেখাতেন না। তাঁর বাবাও তাঁকে ইসলামি জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহ দিতেন। তাঁর বয়স যখন উনিশ, তখন তাঁর বাবা তাকে দামেস্ক শহরে নিয়ে যান। সে-সময় দামেস্ক ছিল ইসলামি জ্ঞানের পীঠস্থান। অনেক জ্ঞানীগুণী মনীষীর সমাবেশ ঘটেছিল সেখানে।
ইমাম নাওয়াউই দামেস্কে গিয়ে জ্ঞান তালাশের কঠোর সাধনায় নিয়োজিত হন। তিনি সে-সময় খুব সামান্য খাবার খেতেন, ঘুমাতেন খুব কম। ফিকহি গ্রন্থের বিশাল বিশাল খণ্ড মুখস্থ করতেন। সারাদিন তিনি পড়াশোনা এবং লেখালেখিতে মগ্ন থাকতেন। ঘুম যখন জড়িয়ে আসত, আর বাঁধ মানত, তিনি তখন বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণ ঘুমাতেন। তারপর উঠে আবার পড়ালেখায় নিমগ্ন হতেন। দামেস্ক থাকা কালে প্রথম ছয় বছর তিনি প্রতিদিন এগারোটি বিষয়ে পড়াশোনা করতেন।
ইমাম নাওয়াউইর স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ। শুধু মুখস্থ করা না, যে শিখেছেন তা বোঝার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রণী। সহজে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারতেন। বিনয়-নম্রতা, ধৈর্য-সবর, সাহসের মতো মহৎ গুণে তিনি ছিলেন ভূষিত। ইমাম নাওয়াউই বিয়ে করেননি কখনো। সারাজীবন নিজেকে ব্যস্ত রাখেন জ্ঞানার্জন ও তা শেখানোর কাজে।
ইমাম নাওয়াউই চার মাযহাবের ফিকহ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করেছেন৷ নিজেকে তিনি বিবেচনা করতেন শাফিয়ি মাযহাবের অনুসারী হিসেবে। এ-মাযহাবের সেবায় তিনি অনেক বইপত্র লিখেছেন। তাঁকে শাফিয়ি মাযহাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইমাম নাওয়াউই বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে আছে: শারহ সহিহ মুসলিম (সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ), রিয়াদুস সালিহিন (হাদিস সংকলন), রাওদাতুত্-তালিবিন, আল-আযকার (দুআ সংকলন), আল-আরবা'ঈন (চল্লিশ হাদিস), বুস্তানুল-আরিফিন (আত্মশুদ্ধি সম্পর্কিত গ্রন্থ), তাবাকাতুশ শাফিয়্যাহ (শাফিয়ি বিদ্বানদের জীবনীগ্রন্থ) প্রভৃতি।
দামেস্ক শহরে ইমাম নাওয়াউই সুদীর্ঘ ২৮ বছর পড়াশোনা ও শিক্ষকতা করেন। ৬৭৬ হিজরি (১২৭৭ খ্রিস্টাব্দ) সনে তাঁর ধার করা সব বই তিনি তাদের অধিকারীদের ফিরিয়ে দেন। নিজের সহপাঠী-সহকর্মীদের সাথে শেষ দেখা করেন। এরপর তিনি জন্মস্থান নাওয়া শহরে ফিরে আসেন। এর কিছুদিন বাদে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৫ বছর। তাঁর মৃত্যুসংবাদে পুরো দামেস্ক শহর শোকসন্তপ্ত হয়ে উঠে। মুসলিমরা তাদের মহান এক ইমামকে হারান। আল্লাহ যেন ইমাম নাওয়াউইর উপর রহম করেন।
Comments
Post a Comment