ইসলামি জ্ঞানার্জনের কিছু শিষ্টাচার
[আমরা যারা ইসলাম নিয়ে সিরিয়াস পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের কিছু আদব-নীতি মাথায় রেখে জ্ঞান তালাশ করতে হবে। সেসব আদবের কিছু বিষয় নিয়ে নিচে কিছু কথা বলবো। আসলে লেখাগুলো আমার জন্য লেখা। অন্যদেরও উপকারে আসতে পারে। তাই এখানে শেয়ার করলাম। ]
সবার আগে আমাদের নিয়তকে বিশুদ্ধ করতে হবে। আমরা জানি, জ্ঞান অর্জন ইসলামে ইবাদাত বলে গণ্য। আর ইবাদাত করতে হয় কেবল আল্লাহর জন্য। সুতরাং, আমাদের জ্ঞান তলাশ-ও হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাঁর আদেশ-নিষেধ জেনে তা পালন করার জন্য। তাঁর নির্দেশিত পথে চলার জন্য।
জ্ঞান তালাশের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই ক্রমধারা অবলম্বন করতে হবে। একদিনে সবকিছু শেখা যায় না। আমরা যে বিষয় শিখতে চাই, সে বিষয়ে আগে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান শিখতে হবে। এরপর ঐ বিষয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চতর পর্যায়ে যেতে হবে। ধরেই উচ্চতর পর্যায়ের বই পড়তে গেলে কিছুই বোঝা যাবে না। ফলে জ্ঞান অন্বেষণে অনীহা সৃষ্টি হবে। তাই আমাদের জ্ঞান অন্বেষণ হবে ধাপে ধাপে। প্রখ্যাত মনীষী তাবিয়ি ইবনু শিহাব আয-যুহরি বলেন:
"যে একসাথে সব শিখতে যায়, সে একসাথেই সব ভুলে যাবে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত যে জ্ঞান তালাশে মগ্ন থাকে, কেবল সেই জ্ঞানার্জনে সাফল্য পায়।" [১]
শেখা জ্ঞান ঝালাই করা জ্ঞান অর্জনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা শিখলাম তা নিয়মিত রিভিশন দিতে হবে। নইলে শেখা বিষয়ও কদিন পর মাথা থেকে চলে যাবে। স্পেসড রিপিটেশন বা বিরতিসহ ঝালাই জ্ঞান সংরক্ষণ এক গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। এই পন্থার কার্যকারিতা প্রমাণিত। তাই, শেখা জ্ঞানকে মাথায় স্থায়ী করতে চাইলে রিভিশন বা ঝালাইয়ের বিকল্প নেই।
অনেকে দেখা যায়, কয়েকটা বই পড়ে কিংবা কোর্স করে নিজেকে অনেক জ্ঞানী ভাবা শুরু করে। অহংকারী মনোভাব নিয়ে এরা অন্যদের কাছে নিজেকে জাহির করে। আসলে, জ্ঞান নিয়ে বড়াই করা জ্ঞানের কমতির আলামত। জ্ঞান আর অহংকার বিপরীতমুখী জিনিস। একটা বাড়ার মানে আরেকটা কমবে। এ-বিষয়ে শাইখ বাকর আবু যাইদ রাহিমাহুল্লাহ খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন। তিনি বলেন: "জ্ঞান অর্জনের ৩টি ধারাবাহিক ধাপ আছে। প্রথম পর্যায়ে মানুষ অহংকারী হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করলে বিনয়ী স্বভাব তৈরি হয়। আর তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করলে মানুষ বোঝে সে কিছুই জানে না।" [২]
অহংকার আসলে জ্ঞানযাত্রীদের পথে কাঁটার মতো। যে নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে জানে কেবল সে-ই জ্ঞান শিখতে পারে। বলা হয়, 'আমি জানি না' বলতে পারা জ্ঞানের অর্ধেক।
জ্ঞান অর্জনের আরো আদবকেতা আছে। সেগুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব না। যারা এ-সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তারা বইপত্রের দ্বারস্থ হতে পারেন। বাংলায় 'জ্ঞানের পথে চলার বাঁকে' বইটা ভালো। ইংরেজি-আরবিতেও এ-বিষয়কে অনেক বই আছে। আগ্রহী পাঠকরা সেগুলো দেখতে পারেন।
--------------
[১] ইবনু আব্দিল বারর, জামিউল বায়ানুল-ইলম, অনুচ্ছেদ ৬৫২
[২] বাকর আবু যাইদ, হিলিয়াতুত-তালিবুল-ইলম, পৃষ্ঠা ৮৭ (ইংরেজি অনুবাদ)
Comments
Post a Comment