আপনি কি মানুষের মাংস খাবেন?


গীবতের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে ইসলাম একে নিষিদ্ধ করেছে। হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি, আত্মীয়তার সম্পর্কে চিড় ধরার অন্যতম কারণ এই গীবত বা পরচর্চা। জীবনের অনেক মূল্যবান সময় আমরা গীবতচর্চায় কাটিয়ে দিই। মানুষের চেহারা-সুরত, হাটা-চলা কিংবা কথা বলার ভঙ্গি- এসব নিয়ে বিদ্রুপ করার মাধ্যমে আমরা আসলে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়েই বিদ্রুপ করছি।

মহান আল্লাহ বলেন,
﴾হে মুমিনগণ, তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কারণ কিছু কিছু অনুমান পাপ, এবং মানুষের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করো না, একজন আরেকজনের নামে গিবত করো না; তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? আর তোমরা অবশ্যই এটা অত্যন্ত অপছন্দ করো; আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুল করেন এবং তিনি একান্ত দয়ালু।﴿ (সূরা হুজুরাত,৪৯:১২)

মানুষের মাংস খাওয়া আমাদের কাছে খুবই ঘৃণ্য কাজ। আল্লাহ গীবত করাকে মানুষের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহর নিকট গীবত যে কতটা ঘৃণ্য তা এখানে বোঝা যায়। আস-সাদী তাঁর তাফসীরে বলেছেন,
“আয়াতটিতে গীবত থেকে সতর্ক করা হয়েছে। গীবত ভয়াবহ পাপ। কারণ আল্লাহ গীবত করাকে মানুষের মাংস খাওয়ার সমতুল্য বলেছেন।”

মানুষের মাংস খাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের কাছে অচিন্ত্যনীয়। যদিও কিছু সমাজে মানুষের মাংস খাওয়া প্রচলিত। আমাদের কাছে এরা অসভ্য,বর্বর। গীবতের ব্যাপারটাও অনেকটা এমন। বরং গীবত বেশি ভয়াবহ। কারণ যারা মানুষের মাংস খায় তারা হয়তো অপরিচিত কারো মাংস খাচ্ছে, কিন্তু আমরা চেনাজানা মানুষের নামে গীবত করে বেড়াচ্ছি।

দুঃখের বিষয় হলো দ্বীন মেনে চলা অনেক মানুষও এ রোগে আক্রান্ত। শয়তান এক্ষেত্রে খুব সহজেই সবাইকে কাবু করে ফেলে।

মানুষ কেন পরচর্চা করে?

১. আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট করা গীবত বা পরচর্চার অন্যতম কারণ। অনেকে নিজে গীবত না করলেও মানুষেরটা উৎকর্ণ হয়ে শোনেন। অনেক আবার চোখের সামনে গীবত হতে দেখলে সামান্যতম প্রতিবাদও করে না।

২. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথা স্মরণ না রাখা।

৩. গীবত থেকে বাঁচতে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ  করুন।

গীবত বা পরচর্চায় অনেকে খুব আনন্দ পান। বিশেষ করে গীবতকৃত ব্যাক্তি যদি তার শত্রু হয়। এই ধরণের মানুষদের জন্য প্রশ্ন  "আপনি যার নামে গীবত করছেন সেও যদি একইভাবে আপনার ভুল-ভ্রান্তি  মানুষকে বলে বেড়ায় তখন আপনার কেমন লাগবে?"

নিজেকে প্রশ্ন করুন:

আপনি কি কখনো কোনো দোষ করেননি?

আপনার দোষ-ত্রুটি সংশোধনের কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?

আপনার কোনো পাপ কি নেই?

তাহলে কেন আপনি অন্যের ভুলের পেছনে লেগেছেন?

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
"সেই উত্তম যে মানুষের ভুল না খুজে নিজের ভুল সংশোধনে তৎপর থাকে।"[১]

আসলে গীবত করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না, জিহ্বাটা নাড়াতে হয় শুধু। বিশেষত আড্ডার সবার যার সাথে শত্রুতা আছে তার গীবত করা। তৃষ্ণার্ত মানুষের কাছে পানি যেমন দরকারি, এদের কাছে গীবতও তেমন। গীবত শোনার সাথে সাথে নিজেরাও গীবতে অংশ নেয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির সামনে গেলে উল্টো তোষামোদি করে।

গীবত করা জিহ্বার মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
"যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।"[২]

আসুন আমরা গীবত থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করি। যাদের নামে গীবত করেছি তাদের কাছে মাফ চাই। আল্লাহ যেন আমাদের গীবত পরিহারের তাওফিক দেন। আমিন।

---- ----
১. শক্তিশালী সনদসহ আল-বাজ্জার বর্ণনা করেছেন
২. বুখারি ও মুসলিম

মূল: হোসেইন আল-গুলেহ
অনুবাদ: শাহরিয়ান নাজিম শিহাব

Comments