মনীষী-জীবনী: ইবনু কুদামাহ আল-মাকদিসি


নাম ও বংশ:

তিনি হলেন মুওয়াফফাক আল-দ্বীন আবু মুহাম্মাদ, আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা ইবনু মিকদাম ইবনু নাসর ইবনু আবদুল্লাহ আল-মাকদিসি আল-জাম্মা'ইলি, পরবর্তীতে আল-দিমাশকি। 


জন্ম:

তিনি ৫৪১ (১১৪৭ ঈসাব্দ) হিজরি সনের শাবান মাসে জামাল নাবলুসের জাম্মা'ইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এর অবস্থান বর্তমান ফিলিস্তিনে।


বাল্যকাল ও ভ্রমণ:

তাঁর বয়স যখন ১০ বছর, তখন তিনি পরিবারের সাথে দামেস্কে যান। সেখানে কুরআন হিফয করেন তিনি। তারপর তিনি 'মুখতাসার আল-খিরাকি' মুখস্থ করেন, যা ইমাম আহমাদের ফিকহের গ্রন্থ। পরবর্তীকালে তিনি এই বইয়ের উপর ৯ খন্ডের ব্যাখ্যাগ্রন্থ লেখেন, যা 'আল-মুগনি' নামে পরিচিত। ফুফাতো ভাই আল-হাফিয আবদুল-ঘানির সাথে ৫৬১ হিজরিতে তিনি বাগদাদ সফর করেন। বাগদাদে তিনি স্থানীয় আলিমদের থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন।

ফিকহশাস্ত্রে লক্ষণীয় পান্ডিত্য লাভ করেন তিনি।  পারদর্শিতা লাভ করেন হানবালি মাযহাব ও এর উসুল তথা মূলনীতির ক্ষেত্রে।


তাঁর দ্বীনদারি ও যুহদ:

তিনি ছিলেন দ্বীনদার, যাহিদ এবং সম্ভ্রান্ত। ছিলেন প্রজ্ঞাবান এবং সহিষ্ণু। তাঁর সময় কাটতো জ্ঞানার্জন আর ইবাদাতে। তিনি বিরোধীদের খন্ডন করতেন প্রমাণ সহকারে। তারা তাঁর সাথে রূঢ়, অসম্মানজনক আচরণ করলেও তিনি থাকতেন শান্ত।


তাঁর শিক্ষকগণ:

তিনি অনেক আলিমের কাছ থেকে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষকগণের মধ্যে কয়েকজন:


  • তাকিউদ্দিন আবু মুহাম্মাদ আবদুল-ঘানি আল-মাকদিসি (মৃ. ৬১২)
  • তাঁর বাবা আহমাদ ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি (৪৯১-৫৫৮)
  • তাঁর বড় ভাই আবু উমার মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি (৫২৮-৬০৭)
  • শায়খ আবদুল-কাদির জিলানি (৪৭১-৫৬১)
  • আবুল ফাতাহ নাসর ইবনু ফিতইয়ান ইবনু মাতর ইবনুল-মান্নি (৫০১-৫৮৩)
  • আবুল ফাতাহ ইবনুল বাত্তি (৪৭৭-৫৬৪)
  • ফাখরুন-নিসা, শুহদাহ—মুহাদ্দিস আবু নাসর আহমাদ ইবনুল ফারাজ আল-দিনাওয়ারির মেয়ে
  • এবং আরো অনেকে।


তাঁর ছাত্র:

তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানার্জনকারীদের মধ্যে আছেন:
  • আল-বাহাউল মাকদিসি (মৃ. ৬২৪), 'আল-উদ্দাহ শারহুল উমদাহ'র রচয়িতা তিনি।
  • দিয়াউদ্দিন আল-মাকদিসি (মৃ. ৬৪৩)
  • তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র: শামসুদ্দিন ইবনু কুদামা (মৃ. ৬৮২)
  • আল-হাফিয জাকিউদ্দিন আবু মুহাম্মাদ আল-মুনদিরি (মৃ. ৬৫৬)
  • শিহাবুদ্দীন আবু-শামাহ আল-মাকদিসি (মৃ. ৬৬৫)
  • এবং আরো অনেকে।


তাঁর ব্যাপারে আলিমদের বক্তব্য:

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া বলেন:
"আল-আওযায়ির পরে শামে এমন কেউ আসেনি ফিকহশাস্ত্র এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে যার জ্ঞান আল-মুওয়াফফাক (ইবনু কুদামা) থেকে বেশি।"

আবু আমর ইবনু আল-সালাহ বলেন:
"আমি শায়খ মুওয়াফফাকের মতো কাউকে দেখিনি।"

আল-মুনদিরি বলেন: 
"তিনি ছিলেন আল-ফাকিহ আল-ইসলাম, দামেস্কে হাদিস বর্ণনা, ফাতওয়া প্রদান এবং শিক্ষাদান করেন তিনি। তিনি ফিকহ ও অন্যান্য বিষয়ে বই লিখেছেন, যার কিছু বৃহৎ আর কিছু সংক্ষিপ্ত।"

আয-যাহাবি বলেন: 
"তিনি ছিলেন মহান ইমাম ও বহু গ্রন্থের লেখক।"

ইবনু রজব আল-হানবালি বলেন: 
"(তিনি ছিলেন) ফকিহ, ইমাম, শাইখুল ইসলাম। ছিলেন অনন্য এক আলিম।"

ইবনু কাসির বলেন: 
"তিনি ছিলেন শাইখুল ইসলাম, ইমাম,  অনবদ্য এক আলিম। তাঁর সময়ে বা পৃর্বে তাঁর চেয়ে ফিকহে অধিক পান্ডিত্যের অধিকারী আর  কেউ ছিল না।"

ইবনুল নাজ্জার বলেন: 
"তিনি ছিলেন দামেস্ক মসজিদে হানবালি ফিকহের ইমাম। ছিলেন বিশ্বস্ত, মহৎ-উদারমন শুদ্ধাচারী চরিত্রে ভূষিত, আবিদ, সালাফ আস-সালিহিনের একনিষ্ঠ অনুসারী। এমনকি তাঁর দৃষ্টি থেকেও উপকৃত হওয়া সম্ভব।"

তিনি ছিলেন সহজ ও কোমল-মনের, নিরহংকারী। দরিদ্রদের ভালোবাসতেন। ছিলেন উত্তম চরিত্রবান,  উদারমন ও উদারহস্ত। তাঁকে দেখা যেন কোনো সাহাবিকে দেখা। তার চেহারা ছিল এমন যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। তিনি ছিলেন প্রচুর ইবাদাতগুজার।


তাঁর কর্ম:

ফিকহ:
  • আল-মুগনি (৯ খন্ড), 
  • আল-কাফি (২ খন্ড), 
  • আল-উদ্দাহ, 
  • আল-উমদাহ এবং 
  • আল-মুকনি।
আকিদাহ:
  • লুমাতুল ইতি'কাদ, 
  • আল-কাদার, 
  • জাম্মিল তাওয়িল।
উসুল:
  • রাওদাতুল নাদর
যুহদ:
  • আল-রিক্কাহ ওয়াল-বুকা,
  • কিতাবুত-তাওয়্যাবিন
হাদিস:
  • মুখতাসার ইলাল আল-হাদিস আল-খাল্লাল 

এবং আরো অনেক।

তাঁর গ্রন্থসংখ্যা চল্লিশের উপরে যার কিছু এখনো পান্ডুলিপি রূপে আছে।


মৃত্যু:

তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৬২০ হিজরীতে (১২২৩ ঈসাব্দ)। তখন কবিরা তাঁর স্মরণে কবিতা রচনা করেন।
মৃত্যুর পরদিন তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত হয় বিপুলসংখ্যক জনতা। অতঃপর কাসিয়ুন পাহাড়ে তাঁকে সমাহিত করা হয়।رَحِمَهُ ٱللّٰهُ 

অনুবাদ: শাহরিয়ান নাজিম শিহাব

Comments