নিজেই যখন নিজের শত্রু


শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ তাঁর এক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি একসময় চাকরিসূত্রে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে এক চা-বাগানের কাছাকাছি বসবাস করতেন। সে চা-বাগানের পাশেই ছিল জঙ্গল। জঙ্গলে ছিল বনবিভাগের হাতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে জঙ্গল থেকে কাটা কাঠ বহনের কাজ করার জন্য হাতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।

সেখানকার জঙ্গলে বিশাল বিশাল গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। একেকটা কাঠের গুঁড়ির ওজন কয়েক টন। আকারেও সেগুলো বিশাল। কাটা কাঠ-খন্ডকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দড়ির একাংশ হাতির শুঁড়ে দেওয়া হয়। আর হাতি সে কাঠ-খন্ডকে টেনে রাস্তায় রাখা ট্রাক পর্যন্ত নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, কাঠ-খন্ডকে ট্রাকের উপর তোলার কাজও করানো হয় হাতি দিয়ে।

মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ একদিন এসব দেখতে গেলেন। সেখানে তিনি দেখলেন একটা বিশাল বড় হাতিকে নারিকেল-তন্তুর তৈরি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। হাতির এক পা দড়ি দিয়ে বাঁধা। হাতিটা যদি একবার একটু জোরে তার পা নাড়ায় তবেই দড়ি ছিঁড়ে যাবে। কিন্তু হাতিগুলো দড়ি ছেঁড়ার কোনো চেষ্টাই করে না। এতে তিনি কিছুটা অবাক হলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের লোকজনকে তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন।

ব্যাপারটা হলো, হাতিগুলো যখন খুব ছোট ছিল তখন তাদের এই নারিকেল-তন্তুর দড়ি দিয়ে বাঁধা হতো। ছোট্ট হাতি শাবকগুলোর পক্ষে সেই দড়ি ছেঁড়া তখন সম্ভব ছিল না। সেগুলো বারবার চেষ্টা করতো। বারবার ব্যর্থ হতো। ফলে একসময় তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে—এই দড়ি ছেঁড়া সম্ভব না। বড় হওয়ার পরও হাতিগুলোর মধ্যে সেই ছোটবেলার প্রভাব রয়ে গেছে। হাতিগুলো এখন বড়,  শক্তপোক্ত আর বলবান হয়েছে। তারপরও তারা দড়ি ছিঁড়তে কোনো চেষ্টাই এখন আর করে না। মূলত দড়ি তাদের পা থেকে মাথায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

আমাদের অনেকের অবস্থা সে হাতিগুলোর মতো। আমরা কোনো কাজ করতে গেলে ‘পারব না'-ব্যাধির কারণে পঙ্গু হয়ে থাকি। অলসতা করি। চেষ্টা করেও দেখি না কাজটা করতে পারি কি-না। এভাবে আমাদের সাফল্যের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াই আমরা নিজেরাই। কিন্তু আসলে আমরা যদি একটু চেষ্টা করতাম তাহলে হয়তো পারতাম। আমাদের মূল শত্রু আমাদের মন, মনে সৃষ্টি হওয়া 'পারব না' টাইপের চিন্তাধারা। সেগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের দুর্দশার বাঁধন ছিঁড়তে পারব।

Comments