মোঘল সাম্রাজ্যের সংস্কারে শাইখ আহমাদ সিরহিন্দির অবদান

 মোঘল সম্রাট আকবর (১৫৪২-১৬০৫ খৃ.) তার সভাসদদের পরামর্শে 'দ্বীন-ই-ইলাহি' নামে নতুন এক ধর্ম চালু করেন। তাদের 'যুক্তি' ছিল— নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর এক হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। ইসলাম পুরোনো হয়ে গেছে। এখন আর ইসলাম চলবে না। এখন আমাদের দরকার নতুন ধর্ম। এসব কুযুক্তি দিয়ে আবুল ফয়েজের মতো কিছু লোক আকবরকে নতুন ধর্ম তৈরি করতে রাজি করান৷ ফলে আকবর ইসলাম, হিন্দুধর্ম আর অন্যান্য মতবাদের মিশ্রণে এক জগাখিচুড়ি ধর্ম বানান। কিন্তু সে ধর্ম বেশি পসার পায়নি। সবমিলিয়ে মাত্র ছয়জন লোক তা গ্রহণ করে। এমনকি আকবরের পরিবারও তার ধর্ম গ্রহণ করেনি।


এই 'দ্বীন-ই-ইলাহি'র প্রভাব রুখতে যেসব আলিম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাঁদের একজন হলেন শাইখ আহমাদ সিরহিন্দি (রাহিমাহুল্লাহ, ১৫৬৪-১৬২৪ খৃ.)। আকবারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো সম্ভব তাঁর পক্ষে যে সম্ভব না তা তিনি জানতেন। তাই তাঁকে বিকল্প পথ বেছে নিতে হয়। 


শাইখ আহমাদ সিরহিন্দি আকবারের উজির-মন্ত্রীদের কাছে হৃদয়গ্রাহী চিঠি পাঠাতে শুরু করেন। এতে ধীরে ধীরে আকবরের প্রায় সব মন্ত্রী তাঁর মুরিদ বা ভক্তে পরিণত হয়। এভাবে তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের সংশোধনে ভূমিকা রাখেন। তাঁর সংস্কার প্রচেষ্টার ফলেই মোঘল সাম্রাজে একসময় আওরঙ্গজেব আলমগিরের (১৬১৮-১৭০৭ খৃ.) মতো শাসকের জন্ম হয়। ইসলামের জন্য আওরঙ্গজেব (রাহিমাহুল্লাহ)-র খেদমতের কথা সুবিদিত। তাঁর নির্দেশে হানাফি ফিকহের বিখ্যাত ফাতওয়াগ্রন্থ 'আল-ফাতাওয়া আল-আলমগিরিয়া' রচিত হয়।


এছাড়া শাইখ আহমাদ সিরহিন্দি সুফিবাদের সংস্কারেও অবদান রাখেন। তিনি ওয়াহদাতুল ওজুদ বা অদ্বৈতবাদের বিরোধিতা করেন। এর খণ্ডন করেন। দ্বীন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে তাঁকে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বলে গণ্য করা হয়। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুক। 


[সোর্স: ড. আকরাম নাদউই'র 'History of Indian Scholarship' কোর্স।]




Comments